মাশরাফি বিন মুর্তজা কি কখনো তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছেন? একটু ভাবলেন। ‘মনে পড়ছে না!’—মাশরাফির মনে করা কঠিনই। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একবারই তিনে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তাও ‘নাইট ওয়াচ ম্যান’ হিসেবে।
ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মিলিয়ে মাশরাফির সেরা ইনিংসগুলোর কোনোটিই তিনে নেমে নয়। ২০১৫ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৩২ বলে অপরাজিত যে ৫৬ রানের ইনিংসটা খেলে দল জিতিয়েছিলেন মাশরাফি, সেটিও পাঁচে নেমে। কাল চমকে দিয়েই চিটাগংয়ের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক নেমে পড়লেন তিন নম্বরে।
টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ভালো বোলিং করছেন। ব্যাটিংটাও যে মন্দ পারেন না, সেটি মাশরাফি অতীতে অনেকবারই দেখিয়েছেন। কিন্তু এই বিপিএলে তা দেখার বাকি ছিল। চিটাগং দর্শকদের দুর্ভাগ্য, কাল মাশরাফি-ঝড়টা উঠল তাদের বিপক্ষেই! যদিও বিশাল কিছু করে ফেলবেন—এই আশা তাঁর ছিল না। ব্যাটসম্যান মাশরাফিকে নিয়ে দলেরও বড় প্রত্যাশা ছিল না।
তবুও তিনে নামার ভাবনাটা মাশরাফির এসেছে ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মন্থর শুরুটা পুষিয়ে দিতে, ‘স্লগ করতেই তিনে নামা। রান হচ্ছিল না। আগের দুই ম্যাচেও নামব (তিনে) ভেবেছিলাম। যেকোনো কারণে হয়নি। আজ (কাল) যেহেতু শিশির পড়ছিল, তাই চিন্তা করে দেখলাম, দেখি কী হয়। স্পিনারদের যদি টার্ন না থাকে, তবে চেষ্টা করব। ভাগ্য ভালো, সব আমাদের পক্ষে এসেছে। এটা আমাদের বিপক্ষেও যেতে পারত। ‘‘আউট অব বক্স’’ চিন্তা না করলে এসব ম্যাচ জেতা কঠিন।’
মাশরাফি যখন ব্যাটিং করছিলেন, কী আশ্চর্য, টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় নাম গেইলকেও ম্লান দেখাচ্ছিল! চিটাগংয়ের তরুণ অফ স্পিনার আল আমিন যেখানে বিরাট ধাঁধা হয়ে উঠেছিলেন ক্যারিবীয় ওপেনারের কাছে, মাশরাফি তাঁকেই স্বচ্ছন্দে পেটালেন! রংপুর অধিনায়কের রান যখন ১২ বলে ২৮, গেইলের তখন ১৬ বলে ১৮ রান! মাশরাফির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে গেইলও যে ছায়া বনে যান, দুর্লভ এই দৃশ্য কাল দেখল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। সানজামুলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে চার ৪ ও ৩ ছয়ে ১৭ বলে খেললেন ৪২ রানের কার্যকর এক ইনিংস। সিলেট সিক্সার্সের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান তাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এ ইনিংসটাই।’
সংবাদ সম্মেলনে গেইলকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কথাটা উঠতেই লাজুক হাসিতে মাথা নিচু করে ফেলেন মাশরাফি! মুখে হাসি ধরে রেখেই বলেন, ‘না, টি-টোয়েন্টিতে গেইল ১০ হাজার রান করেছে। এই সংস্করণে সে রাজা! ওর আশপাশে কেউ নেই।’
মাশরাফি কি সামনের ম্যাচগুলোতেও তিনে নামবেন? এটির নিশ্চয়তা অবশ্য তাঁর কাছে নেই, ‘অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। কোনো প্রত্যাশা জাগিয়ে নামতে চাই না। আজ (কাল) দলকে জেতানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত। এটা আমার বিপক্ষে যেতেও পারে। প্রথম শটে আউট হয়ে গেলে আজও যেতে পারত। ভাগ্য সঙ্গে থাকলে কোনো দিন হবে, কোনো দিন হবে না। সফল হলে আত্মবিশ্বাসটা বাড়ে, এই আরকি!’
সিলেট, ঢাকার পর বিপিএলের চট্টগ্রাম-পর্বেও দেখা যাচ্ছে গ্যালারিভরা দর্শক। তাদের বেশির ভাগই যে চিটাগংকে সমর্থন দিতে আসছে, বুঝতেই পারছেন। কিন্তু কাল ব্যতিক্রম ছবিই দেখা গেল রংপুর-চিটাগং ম্যাচে। মাশরাফি যখন চিটাগংয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন, স্বাগতিক দর্শকেরা তালি-হর্ষধ্বনিতে উত্সাহ দিচ্ছিলেন রংপুর অধিনায়ককে!
বিপিএলের সৌজন্যে মাশরাফি আপাতত রংপুরের হতে পারেন, কিন্তু তাতে তাঁর জন্য বরাদ্দ ভালোবাসা তো হারিয়ে যায় না!
Leave a Reply